চুল পড়া সমস্যার কুরআন ও হাদিসের আলোকে চিকিৎসা
চুল
চুল স্তন্যপায়ী প্রাণীর শরীরে পাওয়া যায় বলে চুল স্তন্যপায়ী প্রাণীর একটি নির্দেশক বৈশিষ্ট্য। চুলের প্রধান উপাদান হচ্ছে কেরাটিন। মানুষ ব্যতীত অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর শরীরে যে নরম, সুন্দর চুল পাওয়া যায় তাকে ফার বা লোম বলে। অন্যদিকে ভেড়া এবং ছাগলের শরীরে উৎপন্ন হওয়া কোঁকড়ানো চুলকে উল বলে।
চুল পড়া রোগের জন্য ঘরোয়া চিকিৎসা
১ নাম্বারঃ- থানকুনী পাতার রস ৬/৭ চামচ একটু গরম করে ১ কাপ দুধের সাথে একটু চিনি মিশিয়ে খেলে শরীরের লাবণ্য ফিরে আসে এবং যাদের শরীরের অপুষ্টির কারণে চুল পড়ে যায় তাদের চুল গজাবে ইনশাআল্লাহ। ( চিরঞ্জীব বনৌষধি খ.১ পৃ.২৬)
২ নাম্বারঃ- ৪৮ গ্রাম তিলের তেল আগুনে খুব জোশ দিবে। জোশ উঠলে তার মধ্যে একটি জোঁক মেরে ছেড়ে দিবে। জোঁক ভষ্ম হওয়ানর পরে নামিয়ে ভালো ভাবে নাড়া দিয়ে মিশিয়ে নিবে। এই তেল চুল খালি স্থানে ব্যবহার করবে চুল উঠা বন্ধ হবে নতুন চুল গজাবে ইনশাআল্লাহ। ( বেহেস্তী জেওর খ.৯ পৃ.৭৮)
নবীজি (সা.) চুলের যত্ন যেভোবে নিতেন
১ নাম্বারঃ- চুলের যতœ নেওয়ার ব্যাপারে হুজুর (সা.) যা বলেছেন।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، قَالَ : قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم : مَنْ كَانَ لَهُ شَعْرٌ فَلْيُكْرِمْهُ
বাংলা অনুবাদ
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম (সা.) বলেছেন, যার চুল আছে সে যেনো তার যতœ করে। আল- আদাবু লিল বায়হাকী খ.১ পৃ.৩৩৭
২ নাম্বারঃ- নবী করীম (সা.) অধিক পরিমাণে মাথায় তেল ব্যবহার করতেন, চুলের যতœ স্বরুপ। তাই আমাদেরও উচিৎ বেশি পরিমাণে মাথায় তেল ব্যবহার করা।
عن أنس بن مالك قال : ্র كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يكثر دهن رأسه وتسريح لحيته ، ويكثر القناع حتى كأن ثوبه ثوب زيات
বাংলা অনুবাদ
আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (সা.) তার মাথায় প্রচুর তেল দিতেন এবং দাড়িতে চিরুনি দিতেন এবং অনেক কাপড় ব্যবহার করতেন এমনকি তার কাপড় ছিলো তেল বিক্রেতার কাপড়ের ন্যায়। শামায়েলে তিরমিজী খ.১ পৃ. ৩৭
৩ নাম্বারঃ- হুজুর (সা.) তাঁর মাথার চুলে চিরুনি করতেন।
عَنْ ابْنِ جُرَيْحٍ قَالَ: كَانَ لِرَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم مُشْطُ عَاجٍ يَتَمَشَّطُ بِهِ
বাংলা অনুবাদ
ইবনে জুরাইজ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (সা.) এর একটি হাড়ের চিরুনি ছিলো, হুজুর (সা.) তা দ্বারা চিরুনি করতেন। (হাদিস নাম্বার ১৩৩৬ কিতাবুত তাবাকাতিল কাবীর লিইবনে সা’য়াদ খ.১)
৪ নাম্বারঃ- রাসূল (সা.) সফরে বের হওয়ার সময়ও চিরুনি সাথে নিয়ে যাইতেন।
عَنْ خَالِدِ بْنِ مَعْدَانَ قَالَ: كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يُسَافِرُ بِالمُشْطِ وَالْمِرَاةِ وَالدُّهْنِ وَالسِّوَاكِ وَالْكُحْلِ
বাংলা অনুবাদ
খালেদ ইবনে মা’দান (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (সা.) সফর করতেন চিরুনি, আয়না, তেল, মেসওয়াক এবং সুরমা নিয়ে। (হাদিস নাম্বার ১৩৩৭ কিতাবুত তাবাকাতিল কাবীর লিইবনে সা’য়াদ খ.১)
৫ নাম্বারঃ- তবে রাসূল (সা.) প্রতিদিন চিরুনি করতে নিষেধ করেছেন।
السنن الكبرى للنسائي – (ج ১ / ص ৪৭)
عن حميد بن عبد الرحمن قال لقيت رجلا صحب النبي صلى الله عليه وسلم كما صحبه أبو هريرة قال نهى رسول الله صلى الله عليه وسلم أن يمتشط أحدنا كل يوم
বাংলা অনুবাদ
হামীদ ইবনে আব্দির রহমান থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি এক ব্যক্তির সাথে সাক্ষাত করলাম যিনি নবীজি (সা.) এর সহবাতে ছিলেন, যেমন আবু হুরায়রা নবীজির সহবাতে ছিলেন তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) নিষেধ করেছেন, আমাদের কেউ জানি প্রতিদিন চিরুনি না করে। ( আস সুনানুল কুবরা লিন্নাসায়ী খ.১ পৃ.৪৭)
তবে এই হাদিসে যে, প্রতিদিন চিরুনি করতে নিষেধ করা হয়েছে, এর দ্বারা হারাম উদ্দেশ্য না। বরং নিষেধ দ্বারা মাকরুহে তানজিহি উদ্দেশ্য। উদ্দেশ্য হলো, মাথায় চিরুনি বার বার না করা এবং চুলের যতেœর ক্ষেত্রে বেশি সময় অপচয় না করা।
চুল পড়া রোগের জন্য আকাবিরদের চিকিৎসা
১ নাম্বারঃ- মাথার চুল পড়ে যায়, মানুষ বা জিনের নজর লাগার কারণে। যদি কারো চুল পড়া শুরু হয়, আর ডাক্টার দেখিয়েও তেমন ফায়দা না পাওয়া যায়, তাহলে বুজবেন যে, আপনার নজর লেগেছে। সে ক্ষেত্রে করণীয় হলো, মেয়ে হলে আপনি পর্দা করা শুরু করবেন। আর আয়নার সামনে দাড়িয়ে সূরা ত্বীনের নি¤েœর আয়াতগুলো পাঠ করবে।
وَالتِّينِ وَالزَّيْتُونِ (১) وَطُورِ سِينِينَ (২) وَهَذَا الْبَلَدِ الْأَمِينِ (৩) لَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنْسَانَ فِي أَحْسَنِ تَقْوِيمٍ [التين/১-৪]
যখন আপনি لَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنْسَانَ فِي أَحْسَنِ تَقْوِيمٍ [التين/১-৪] পাঠ করবেন তখন আপনি অনেক বার তাকরার করবেন। তারপর সূরা ফালাক ও নাস ১১ বার করে পাঠ করে, আয়নার দিকে তাকিয়ে হাতের তালতে হালকা থুথু দিয়ে তা দিয়ে মাথা মাসেহ করবে। এভাবে কিছু দিন আমল করলে সমস্যা দূর হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
২ নাম্বারঃ- প্রতিদিন অলিভ অয়েল তেল হাতে ঢেলে নি¤েœর আয়াতটি বেজোড় সংখ্যায় পাঠ করে ঐ তেলের উপর ফুঁক দিয়ে তা মাথায় ব্যবহার করবে ইনশাআল্লাহ চুল পড়া বন্ধ হয়ে যাবে। আয়াতটি এইঃ
وَإِذَا مَرِضْتُ فَهُوَ يَشْفِينِ [الشعراء/৮০]
Comments (0)