মৃগী রোগের কুরআন ও হাদিসের আলোকে চিকিৎসা
মৃগী রোগ ও তার চিকিৎসা
মৃগী রোগ যাকে ইংরেজিতে বলা হয়,Epilepsy, মৃগী হলো, নিউরোলজিক্যাল বা স্লায়ুবিক রোগ যাতে খিঁচুনি হয়।
এই রোগের আসল কারণ না জানা গেলেও মস্তিষ্কে আঘাত, স্ট্রোক, মস্তিষ্কে টিউমার, জন্মগত ত্রুটি ও জিনের কারণে এই রোগ হয়ে থাকে।
মৃগী রোগীরা কেমন হয়?
১- ঝগড়া করার প্রবণতা
২- অস্বাভাবিকআত্মকেন্দ্রিকতা
৩- খিটখিটে মেজাজ
৪- ধর্মের প্রতি গোড়া
৫- যে কোন বিষয় নিয়ে চিন্তা করতে থাকা ইত্যাদি
মানুসিক প্রতিক্রিয়া
যে সমস্ত রোগীরা দীর্ঘদিন ধরে মৃগী রোগে ভুগছেন, তাদের মানুসিকতায় কিছু পরিবর্তন দেখা যায়। মৃগী রোগীদের ২০ শতাংশের মধ্যে স্থায়ী কিছু পরিবর্তন দেখা যায়। আর তা হলো এইঃ
১- ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন
২- বুদ্ধিমত্তার ঘাটতি
৩- স্বেচ্ছায় নিজের ক্ষতি করার চেষ্টা করা
৪- সব সময় বিষণœতায় ভোগা
৫- আবেগ বেশি হওয়া
৬- আত্মহত্যার প্রবনতা (উইকিপিডিয়া ওয়েবসাইট)
কতদিন পর পর এ রোগ দেখা দিতে পারে?
মৃগী রোগাক্রান্ত ব্যক্তি কেউ সপ্তাহে, কেউ মাসে, কেউ বছরে আবার কেউ বছরে একবারে এক বার বেহুশ হয়। কোন রোগীর মুখ দিয়ে ফেনা বের হয়, হাত পা বাঁকা হয়ে যায়, কারো কারো কারো খিচুনীয় হয়। এসব রোগীর আত্মরক্ষা জ্ঞান রোপ পায়। (বেহেস্তী জেওর খ.৯ পৃ.৭৮)
ছোট বাচ্চাদের জিনের কারণে এই রোগ দেখা দিলে, অনেক সময় খেচুনী কয়েক মিনিট পর পর হতে থাকে। এক্ষেত্রে জিনের চিকিৎসা প্রয়োগ করলে অতিদ্রæত সুস্থ হয়। আর যদি বাচ্চাদের এ অবস্থা ভয়ানক আকার ধারণ করে তবে অতিদ্রæত ডাক্টারের সাথে পরামর্শ করা ভালো কারণ অনেক সময় দেখা যায় জিনের কারণে হলেও শারীরিক রোগে রুপান্তরিত হয়েছে। তাই ডাক্টার দেখানোই ভালো কারণ জিনের সমস্যার কারণে ঐ পরিমাণ ক্ষতি হয় না যে পরিমাণ ক্ষতি শারীরিক রোগের কারণে হতে পারে।
আবার অনেক সময় দেখা যায় গর্ভবতী মহিলাদের খেচুনী হয় এটাও অবিজ্ঞতার আলোকে দেখা যায় যে জিনের কারণে এমন হয়ে থাকে, তবে সাধারণ যারা মুদাব্বির তারা এদের শরীরেও জিন হাজির করে জিনের সাথে কথা বলে জিনকে বিদায় করতে চায় এবং করেও, তবে সামধান এইরুপ করার কারণে অনেক সময় গর্ভের বাচ্চা নষ্ট হয়ে যায় আবার মারাও যায় । তাই এসব ক্ষেত্রে নিতি হলো, কিছু কৌশল ও তদবীরের মাধ্যমে রোগীকে সুস্থ করে জিনকে দূরে রাখার চেষ্টা করবে। এসব রোগীদের কিভাবে চিকিৎসা করবে তা আমরা একটু পরে আলোচনা করবো ইনশআল্লাহ।
মৃগী রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা
১ নাম্বারঃ ষষ্টিমধু এক বা দুই গ্রাম মাত্রায় নিয়ে পাকা চালকুমড়ার রস আধকাপের সাথে মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খেতে হবে এভাবে কিছু দিন করলে, এর দ্বারা যার সমস্যা বার বার হচ্ছে তা কুমে যাবে। আর এই ধারা কিছু দিন ধরে রাখলে, এই সমস্যা আর থাকবে না ইনশাআল্লাহ।(চিরঞ্জীব মনৌষধি খ.৬ পৃ.২৮)
২ নাম্বারঃ তেলাকুচার পাতা ও তার মূলের রস একটু গরম করে ছেকে নিয়ে এক চা-চামচ করে দিনে ২ বার খেতে হবে। এভাবে কিছু দিন খেতে থাকলে ইনশাআল্লাহ মৃগীর বার বার যে আক্রমণ হচ্ছিল তা কুমে যাবে। (চিরঞ্জীব মনৌষধি খ.২ পৃ.৩১)
৩ নাম্বারঃ শতমূলীর রস জ্জ চা-চামচ সিকি কাপ কাঁচা দুধের সাথে মিশিয়ে সকাল-বিকাল ২ বার খেতে হবে। কিছু দিন ধরে না খেলে এটা সারবে না। কমপক্ষে ৪/৫ মাস ধরে খেতে হবে।অবস্য আসতে আসতে এই আক্রমণের তীব্রতা কুমে যাবে। (চিরঞ্জীব মনৌষধি খ.২ পৃ.১৭১)
৪ নাম্বারঃ নাবালেগ ছেলে-মেয়েদের মৃগী রোগ হলে সিংহের কিছু চামড়া পশমসহ মাদুলীতে ভরে কোমরে ব্যবহার করলে মৃগী রোগ ভালো হয়। তবে বালেগ হলে ইহা আর কাজ করে না। তবে এটাকে তাবিজ মনে করে ব্যবহার করবে না কোন চিকিৎসাই যদি ফায়দা না হয় তাহলে এটা ব্যবহার করবে। (হায়াতুল হায়াওয়ান)
নবীজি (সা.) এর দুআ দ্বারা মৃগী রোগের চিকিৎসা
নবী করীম (সা.) এর নিকট মৃগী রোগী আসলে তিনি করেছেন চলুন আমরা হাদিস থেকে জেনে নেই।
عن عَطَاءِ بْنُ أَبِى رَبَاحٍ قَالَ قَالَ لِى ابْنُ عَبَّاسٍ أَلاَ أُرِيكَ امْرَأَةً مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ قُلْتُ بَلَى. قَالَ : هَذِهِ الْمَرْأَةُ السَّوْدَاءُ أَتَتِ النَّبِىَّ قَالَتْ إِنِّى أُصْرَعُ وَإِنِّى أَتَكَشَّفُ فَادْعُ اللَّهَ لِى. قَالَ إِنْ شِئْتِ صَبَرْتِ وَلَكِ الْجَنَّةُ وَإِنْ شِئْتِ دَعَوْتُ اللَّهَ أَنْ يُعَافِيَكِ. قَالَتْ أَصْبِرُ. قَالَتْ فَإِنِّى أَتَكَشَّفُ فَادْعُ اللَّهَ أَنْ لاَ أَتَكَشَّفَ. فَدَعَا لَهَا
বাংলা অনুবাদ
আতা ইবনে আবু রাবাহ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমাকে ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, আমি কি তোমাকে একজন জান্নাতি মহিলা দেখাবো! আমি বল্লাম হ্যাঁ, তিনি বললেন, এই কৃষ্ণকায় মহিলাটি নবী (সা.) এর নিকটে এসে বলল যে, আমি মৃগী রোগে আক্রান্ত আর সে কারণে আমার দেহ থেকে কাপড় সরে যায়।
সুতরাং আপনি আল্লাহ তা’য়ালার কাছে আমার জন্য দুআ করুণ। তিনি (সা.) বল্লেন, তুমি যদি চাও সবর তোমার জন্য জান্নাত রয়েছে। আর যদি চাও আমি তোমার রোগ নিরাময়ের জন্য আল্লাহ তা’য়ালার কাছে দুআ করবো। স্ত্রী লোকটি বলল, আমি সবর করবো। অতঃপর সে বলল ( রোগ উঠার সময়) আমার কাপড় দেহ থেকে সরে যায়, সুতরাং আপনি আল্লাহ তা’য়ালার কাছে দুআ করুণ, যেনো আমার দেহে থেকে কাপড় সরে না যায়। ফলে নবী (সা.) তার জন্য দুআ করলেন। (আল মুসনাদুল জা’মে লি আবিল ফজল খ.৩ পৃ.৩৪৮)
এই হাদিস থেকে যা বুজে আসেঃ এই হাদিস থেকে বুজা যায় মৃগী রোগীদের জন্য যদি দু’আ করা যায়, তাহলে আল্লাহ তা’য়ালা এই রোগ থেকে মুক্তি দিবেন এটাই বুজে আসে। কিন্তু প্রশ্ন হলো আমরা কিভাবে এই রোগীদের জন্য দুআ করবো?
আমি এই বিষয় দীর্ঘ মুতা’য়ালা ও চিন্তা ভাবনার পরে আমার হৃদয়ে এ কথা উদয় হয়েছে যে, নি¤েœর পন্থায় দুআ করলে হয়তো আল্লাহ তা’য়ালা এই রোগ থেকে মুক্তি দিবেন।
মৃগী রোগের জন্য আকাবিরদের চিকিৎসা
১ নাম্বারঃ- নিম্নের আয়াতটি ৩ বার লিখে মাথায় ধারণ করলে মৃগী রোগ ভালো হবে ইনশাআল্লাহ। আয়াতটি এইঃ-
إِنَّ الَّذِينَ فَتَنُوا الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ ثُمَّ لَمْ يَتُوبُوا فَلَهُمْ عَذَابُ جَهَنَّمَ وَلَهُمْ عَذَابُ الْحَرِيقِ [البروج/১০]
২ নাম্বারঃ- যে রোগী মৃগীর প্রভাবে বেহুশ হয়ে গেছে, নিম্নের দুআটি পাঠ করে তার কানে ফুঁক দিলে সে সুস্থ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। দুআটি এইঃ-
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيْمِ – المص – طسم – كهيعص – يس – وَ الْقُرْأَنِ الْحَكِيْمِ حمعص – ن- وَالْقَلَمِ وَمَا يَسْطُرُوْنَ –
৩ নাম্বারঃ- মৃগী রোগীর কানে সূরা আশ শামস পাঠ করে শোনালে সে এই রোগ থেকে মুক্তি পাবে ইনশাআল্লাহ। তবে এই আমলটি ৪১ দিন করলে বেশি ফায়দা পাওয়া যাবে।
৪ নাম্বারঃ- সূরা তাহরীম পাঠ করে পানিতে ফুঁক দিয়ে ঐ পানি রোগীকে পান করালে রোগী সুস্থ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ তবে এই আমলটিও একাধারে ৪১ দিন করবে।
৫ নাম্বারঃ- সূরা সিজদা লিখে কোমরে ব্যবহার করলে মৃগী রোগ আর উঠবে না ইনশাআল্লাহ।
৬ নাম্বারঃ- যখন মৃগী রোগীর রোগটি উঠে তখন নিম্নের আয়াতগুলি পাঠ করে রোগীকে ফুঁক দিলে এবং পানিতে ফুঁক দিয়ে রোগীর চেহারায় ছিটিয়ে দিলে এই রোগ চলে যাবে ইনশাআল্লাহ। আয়াতগুলি এইঃ-
٭بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ- الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ- الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ- مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ- إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ- اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ- صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ-
٭بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ- اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ لَا تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلَا نَوْمٌ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ مَنْ ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلَا يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِنْ عِلْمِهِ إِلَّا بِمَا شَاءَ وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَلَا يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ
٭بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيم- قُلْ أُوحِيَ إِلَيَّ أَنَّهُ اسْتَمَعَ نَفَرٌ مِنَ الْجِنِّ فَقَالُوا إِنَّا سَمِعْنَا قُرْآنًا عَجَبًا- يَهْدِي إِلَى الرُّشْدِ فَآمَنَّا بِهِ وَلَنْ نُشْرِكَ بِرَبِّنَا أَحَدًا- وَأَنَّهُ تَعَالَى جَدُّ رَبِّنَا مَا اتَّخَذَ صَاحِبَةً وَلَا وَلَدًا- وَأَنَّهُ كَانَ يَقُولُ سَفِيهُنَا عَلَى اللَّهِ شَطَطًا-
( আমলিয়াতে কাশমীরী ৭৩-৭৪)
৭ নাম্বারঃ- নিম্নের দুআটি লিখে তামার মাদুলীতে ভরে শরীরে ব্যবহার করলে মৃগী রোগ দূর হবে ইনশাআল্লাহ। দুআটি এইঃ-
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيم-رب أَنِّي مَسَّنِيَ الشَّيْطَانُ بِنُصْبٍ وَعَذَابٍ رب اني مسني الضر وانت ارحم الراحمين رب اعوذبك من همزات الشياطين واعوذبك رب ان يحضرون – و صلى الله على النبي واله وسلم –
(আসান আমলিয়াত ও তাবিজাত খ.১ পৃ.১৫৭)
৮ নাম্বারঃ- যখন মৃগী রোগ দেখা দিবে তখন ডান কানে আজান ও বাম কানে ইকামত দিবে আশা করা যায় কয়েক মিনিটের মধ্যে সুস্থ হয়ে যাবে। এভাবে তিন বার করতে পারলে আর কখনও এই সমস্যা হবে না ইনশাআল্লাহ। ( লজ্জাতুন নেছা পৃ.৪৫৪)
Comments (0)